গাজীপুর প্রতিনিধি:
গাজীপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের সুযোগে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, সরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
কয়েকদিনের নাশকতার ঘটনায় গাজীপুরের ৬টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় ৫১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম। তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) থেকে টানা কয়েকদিন ধরে চলা আন্দোলনের নামে নাশকতার এসব ঘটনা ঘটে। নাশকতাকারীরা মহানগরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, হামলাকারীরা চান্দনা চৌরাস্তায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৩টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারা ৪টি ট্রাক, হাইড্রোলিক হ্যামার, বিআরটি প্রজেক্টের অফিস গেইট ও ভবনসহ অন্যান্য মালামাল ভাঙচুর করে। এতে দুই কোটি ১৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া হামলায় বিআরটি প্রজেক্টের ২৫টি এসক্যালেটর, একটি লিফট, দুই হাজার বর্গ মিটার এসএস রেলিং, একটি এস্কাভেটর, ৩ হাজার কেজি এমএসই ওয়াল প্যানেল ফর্ম ওয়ার্ক, ৬টি ইলেকট্রিক হ্যামার, ৪টি ওয়েল্ডিং মেশিন, ২টি রোড কাটিং মেশিন, ৩৬০ মিটার ফেন্সিং ও প্লাস্টিক ট্রাফিক ব্যারিয়ার, ৭টি স্টেশনে জেনারেটর, পানির লাইন ও ইউলিটি সংযোগ এবং একটি প্রকল্প সাইট অফিসের ক্ষতি সাধন হয়েছে। এতে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। তবে বিআরটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ দাবি করেন তাদের প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
টঙ্গীতে ডেসকোর কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সাতটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, উপ-কেন্দ্রের অফিস ভবন, ১০টি কম্পিউটার, ৭টি প্রিন্টার, এসি কমপ্রেসারসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ও সামগ্রী ব্যাপক ভাঙচুর করে তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি করা হয়েছে।
হামলাকারীরা টঙ্গীর বেক্সিমকো ফার্মা’র ভিতরে ৪টি গাড়ি পুড়িয়েছে। তারা ৬টি সিসি ক্যামেরা, ৬টি কাভার্ড ভ্যান, ২টি মাইক্রোবাস ভাঙচুর ও বিল্ডিংয়ের ক্ষতিসহ মোট ৯৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধন করেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ৫টি পুলিশ বক্সে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৯টি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তারা সিটির জোন-১ এর ভবনের দরজা, জানালা ভাঙচুর এবং নিচতলার ৩টি কক্ষ পুড়িয়ে দেয়। আঞ্চলিক কার্যালয় জোন-৩ এর ভবনের দরজা জানালাও ভাঙচুর করা হয়।
এদিকে ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের এমডি ড. মো. মনিরুজ্জামান, বিআরটি’র প্রকল্প পরিচালক এএসএম ইলিয়াস শাহ ও সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক মহিরুল ইসলাম খান বুধবার (২৩ জুলাই) বিকেলে উত্তরা থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন। পরে তারা নগরীর বড়বাড়ি এলাকায় সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রকল্পের ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে ব্রিফিং করেন।
ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেডের এমডি ড. মো. মনিরুজ্জামান জানান, প্রাথমিক হিসেবে প্রকল্পের প্রায় ৫০-৬০ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে আমাদের হিসেবে ৬টি প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৫১ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে।