নিজস্ব প্রতিবেদক,
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ চালানোর অভিযোগে ধর্মভিত্তিক দলটিকে নিষিদ্ধ করল সরকার।
বৃহস্পতিবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখার সচিব মো. জাহাংগীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াত ১৯৭২ সালেও নিষিদ্ধ হয়েছিল। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে দলটি রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পায়। এরপর নানা সময়ে দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল। এখন নিষিদ্ধ হওয়ায় চার দশক পর সেই দাবি পূরণ হলো।
সরকারের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই- ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
পাশাপাশি এক রিট মামলায় হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগও তা বহাল রেখেছে।
আদেশে বলা হয়েছে, যেহেতু, সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ রহিয়াছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং উহার অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল; এবং যেহেতু, সরকার বিশ্বাস করে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সহিত জড়িত রহিয়াছে; সেহেতু, সরকার, সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ১৮(১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ উহার সকল অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসাবে তালিকাভুক্ত করিল।
সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গত ২৬ জুলাই রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠক ১৪ দলের জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।
এরপরই নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির। দলটির রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কথাও বলেন।
সবশেষ বুধবার বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ‘নির্বাহী আদেশে যেকোনো সময় জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে’ বলে জানান।
সেদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। এখনও প্রক্রিয়াধীন। যেকোনো মুহূর্তে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। প্রজ্ঞাপন জারি হবে যেকোনো মুহূর্তে।’
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সকালে আইন মন্ত্রণালয়ে নথি পাঠিয়েছিল। আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং করে আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। ‘কিছুক্ষণের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। এরপর বিকালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরপাত্তা বিভাগ থেকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।