আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২৪ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
রবিবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় মুয়ান কাউন্টির একটি বিমানবন্দরে জেজু এয়ারের যাত্রীবাহী একটি বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে দেয়ালে ধাক্কা লেগে আগুন লাগে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এটি দেশটির সবচেয়ে মারাত্মক বিমান বিপর্যয়গুলোর একটি।
দুর্ঘটনায় দুজন ছাড়া বাকি সবাই নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনাটি স্থানীয় সময় রবিবার সকাল ৯টা ৭ মিনিটে ঘটে। জেজু এয়ারের ফ্লাইটটি অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে সরে যায় এবং সিউলের প্রায় ২৮৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে দক্ষিণ জিওলা প্রদেশের মুয়ান কাউন্টির মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি দেয়ালের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার হওয়া দুজন বাদে বিমানে থাকা সকলেই নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিকাল ৩টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত দুর্ঘটনায় ১২৪ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।
নিহতদের মরদেহ উদ্ধারে অভিযান চলছে।
স্থানীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানটি ল্যান্ডিং গিয়ার স্থাপন না করে অবতরণের চেষ্টা করছে। বিমানটি মাটিতে ছিটকে পড়ে, বিস্ফোরণের আগে একটি কংক্রিটের দেয়ালে বিধ্বস্ত হয় এবং আগুন লেগে যায়।
অগ্নিনির্বাপক সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, “বিমানটি দেয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লাগার পর যাত্রীরা বিমান থেকে ছিটকে পড়েন। বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।”
“বিমানটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং নিহতদের সনাক্ত করা কঠিন,” ওই কর্মকর্তা বলেন।
তিনি আরও বলেন, “আমরা দেহাবশেষ উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় আছি, এতে সময় লাগবে।”
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার করায় মাত্র দুই ক্রু বেঁচে যান। তাদের মোকপোতে পৃথক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের আঘাত জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল না।
বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটিতে ছয়জন ক্রু সদস্যসহ মোট ১৮১ জন আরোহী ছিলেন, যা রাত দেড়টায় ব্যাংকক থেকে ছেড়েছিল। এটি সকাল রবিবার সকালে সাড়ে ৮টায় মুয়ানে পৌঁছানোর কথা ছিল।
বিমানটিতে থাকা দুই থাই নাগরিক ছাড়া অধিকাংশ যাত্রীই কোরিয়ান।
নিহতদের মরদেহ রাখার জন্য মুয়ান বিমানবন্দরের ভেতরে একটি অস্থায়ী মর্গ স্থাপন করা হয়েছে।
কর্মকর্তাদের ধারণা, সম্ভবত পাখির আঘাতের কারণে ল্যান্ডিং গিয়ারের ব্যর্থতা দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সঠিক কারণ নির্ণয় করতে তারা ঘটনাস্থলে তদন্ত শুরু করেছন।
দক্ষিণ জিওলা কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ স্তরে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে এবং দুর্ঘটনাস্থলে পুলিশ কর্মীদের মোতায়েন করেছে।
ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোই সাং-মোক মুয়ান কাউন্টিকে একটি বিশেষ দুর্যোগ অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করেছেন। কারণ তিনি অনুসন্ধান অভিযানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ এবং দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
চোই শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন এবং তাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সরকারি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় দিনের প্রথম দিকে শীর্ষ সচিবদের একটি জরুরি সভা আহ্বান করে এবং অনুসন্ধান ও অন্যান্য অপারেশনগুলোর সময়মত প্রতিক্রিয়ার জন্য একটি রাউন্ড-দ্য-ক্লক জরুরি ব্যবস্থা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
প্রেসিডেন্সিয়াল চিফ অফ স্টাফ চুং জিন-সুকের সভাপতিত্বে বৈঠকে কর্মকর্তারা দুর্ঘটনার তদন্তে আন্তঃসংস্থা সমন্বয়ের উপায় এবং চিকিৎসা ও অন্যান্য সহায়তা নিয়েও আলোচনা করেন।
জেজু এয়ারের সিইও কিম ই-বে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন এবং যারা তাদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন সেসব পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে সমস্ত প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।